তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি যে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছে, দেশকে তারা জিয়াউর রহমানের মার্শাল ডেমোক্রেসিতে নিয়ে যেতে চায় কি না সেটিই হচ্ছে আমার প্রশ্ন।’
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নবনির্বাচিত কমিটির সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সভায় সংস্থার পক্ষে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
ড. হাছান বলেন, ‘আজকে দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, জাতিসংঘের মহাসচিব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সমস্ত বিশ্ব নেতারা সেটির প্রশংসা করছে। ক’দিন আগে বিশ্ব ব্যাংকের এ অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, এই সংকটময় পরিস্থিতিতেও এবং করোনাকালে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়ন-অগ্রগতি করেছে, এটি অন্য দেশের জন্য উদাহরণ। যাদের জন্ম আসলে অগণতান্ত্রিকভাবে তারা যখন রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে, তখন মানুষ ভাবে তারা আবার মার্শাল ডেমোক্রেসিই আনতে চান।’
এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রশ্নে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। তারা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী এবং গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঘটনাটি কোনো ঘটনাই হতো না যদি তিনি যারা ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল তাদের বক্তব্যটি শুনতেন বা অন্তত স্মারকলিপিটা নিতেন। সেখানে যারা তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল, তারা তাকে হুটহাট করে গাড়িতে তুলে না নিয়ে বরং তাদের দু’-চারটি কথা শোনার ব্যবস্থা করলে এটি কোনো ঘটনাই ছিল না।’
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবিস্তারে বলেছেন সেখানে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী জানান, ‘কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে সম্মানিত রাষ্ট্রদূতের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছিল, স্যার স্যার বলে ডাকছিল, কিন্তু স্যার হুটহাট করে গাড়িতে উঠে গেছেন। নিরাপত্তাজনিত কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মন্তব্য ‘জনগণ এ সরকারকে চায় না’ এ প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি যদি মনে করে থাকেন জনগণ এই সরকারকে চায় না, তাহলে বিএনপি নির্বাচনে আসুক তখন বোঝা যাবে জনগণ কাদেরকে চায়! তারা তো জনগণের কাছে বহুবার আহ্বান জানিয়েছে, সাড়া পায়নি। ১০ তারিখ তো সরকার পতন ঘটাতে চেয়েছিল, কিন্তু নিজেরাই পদত্যাগ করে চলে গেছে।’
পুলিশের তল্লাশিতে বিএনপি নয়াপল্টন অফিসের প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে এমন মন্তব্যের বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি শুরু থেকেই তাদের অফিসে পুলিশ তল্লাশি নিয়ে অতিরঞ্জিত বক্তব্য রাখছে। প্রথম দিন পুলিশ সেখানে তল্লাশি করে তাজা বোমা পেয়েছে। যে অফিসে তাজা বোমা পাওয়া যায়, সেখানে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি হবে এটি খুবই স্বাভাবিক। সেখানে শুধু তাজা বোমা নয়, নগদ টাকা, লাঠিসোটা, ১৬০ বস্তা চাল, আড়াই লাখ বোতলজাত পানিসহ আরো অনেক কিছু পাওয়া গেছে, যেগুলো স্বাভাবিক নয়। পুলিশ তল্লাশির স্বার্থে তল্লাশি করেছে। বিএনপি যে অভিযোগগুলো করছে সেগুলো সঠিক নয়।’
অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আমাদের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ অফিসে বহুবার পুলিশ গিয়ে তছনছ, তল্লাশি করেছে এবং অফিস থেকে অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। এগুলো বিএনপির হয়তো মনে নেই। তাই ড. খন্দকার মোশাররফ সাহেবকে আমি সবিনয়ে অনুরোধ জানাবো একটু পিছনে ফিরে তাকানোর জন্য।’
এর আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমের সাথে ছিলাম, আছি ও থাকব। ডিআরইউতে গত ২৭ বছরে রাজনৈতিক বিভাজন হয়নি। আমি আশা করবো ভবিষ্যতেও হবে না। করোনাকালসহ সবসময় আপনাদের কর্মসূচিগুলো সাংবাদিকদের কল্যাণে ভূমিকা রেখেছে। ডিআরইউ আয়োজিত প্রশিক্ষণে প্রেস ইনস্টিটিউট সহায়তা দিয়ে থাকে এবং তা আরো বাড়বে। তবে আপনাদের আর্থিক বরাদ্দের দাবির প্রেক্ষিতে জানাচ্ছি যে, মন্ত্রণালয়ের এ ধরণের কোনো খাতই নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সব মানুষের জন্য এবং বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ আইন রয়েছে। সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলব।